আমেরিকার হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড গার্ডনার প্রদত্ত মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক গবেষণায় দেখা যায় যে, মানুষের কমপক্ষে আট ধরণের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। এ বুদ্ধিমত্তার মাত্রাও
সকলের সমান নয়। প্রত্যেকেই একাধিক বুদ্ধিমত্তা প্রবল। সাধারণত কেউ কোনটাতে
প্রবল আবার অন্যটিতে দুর্বল। আচরণ ও কার্যকলাপের মাধ্যমে সহজেই পর্যবেক্ষণ
করা যায়। তবে ভিন্ন ভিন্ন বুদ্ধিমত্তার লক্ষণগুলোও ভিন্ন ভিন্ন। বুদ্ধিমত্তা ৮ প্রকার যথাঃ
মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা:
যারা
এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা জটিল বিষয়ও সহজভাবে কথায় লিখে প্রকাশ করতে
পারে। তাদের ভাষা থাকে প্রঞ্জল ও সাবলীল। তারা বই পড়া, কবিতা বা গল্প লেকা,
আলোচনায় অংশগ্রহণ করা, কৌতুক বলা, সাহিত্য সৃষ্টি করা ইত্যাদি বেশি পছন্দ
করে। তারা নতুন শব্দ লিখতে ভালবাসে।
যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা:
যারা
এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা সমস্যা সহজে বুঝতে পারে এবং যুক্তি প্রয়োগ করে
তা সমাধান করতে চায়। তারা সংখ্যা ও গাণিতিক সংজ্ঞা ও ফর্মুলা সহজে আয়ত্ব করে।
এরা যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং বিশ্লেষণগত কাজ
নিয়ে বেশি চিন্তা করে।
দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা:
যারা
এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা সহজে রূপ কল্পনা করে এবং পরিবেশের বিভিন্ন
বস্তু, তাদের আকৃতি, রং, গঠন প্রভৃতি নিয়ে অধিক চিন্তা করে। তারা আকর্ষণীয়
ডিজাইন ও প্যাটার্ন পছন্দ করে। এ ছাড়া সহজে নকশা, চার্ট ও মানচিত্র দেখে
বুঝতে পারে। ‘মনের চোখে দেখার কাজ’, যেমন কোন বস্তু বা ঘটনা চোখ বন্ধ
অবস্থায় রূপ কল্পনা করা, দিবাস্বপ্ন দেখা ইত্যাদি করতে ভালবাসে।
অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা:
যারা
এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা স্নায়ুবিক ভাবে অতি সচেতন। স্পর্শ মাত্রই অনুভব
করে। এরা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন, নাচ, অভিনয় ইত্যাদি বেশি পছন্দ করে।
শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দ্বারা বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহার সহজে মনের ভাব প্রকাশ
করে এবং বিষয়বস্তু বুঝতে পারে। এরা খেলাধুলা পছন্দ করে এবং দীর্ঘ সময় এক
স্থানে স্থির হয়ে বসে থাকতে চায় না।
ছন্দ ও সংগীতমূলক বুদ্ধিমত্তা:
যারা
এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা কন্ঠ সংগীত ও বাদ্য বাজানো ভালবাসে। পরিবেশের
বিভিন্ন শব্দ ও ছন্দ তাদের মনে ও দেহে প্রভাব বিস্তার করে। টিনের চালে
বৃষ্টির শব্দ, ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ ইত্যাদি এদেরকে আকৃষ্ট করে। এরা সংগীত
রচনা করতে, সূর দিতে এবং বিভিন্ন প্রকার বাদ্যযন্ত্রের শব্দ সমন্বয় করে
সংগীত অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে সক্ষম।
আন্ত:ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা:
যারা
এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা সাধারণত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়বস্তু সহজে
আয়ত্ব করে। অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় এবং তাদের সমস্যা ও মনোভাব সহজে
বুঝতে পারে। এরা সহজে বন্ধু-বান্ধব জোটায় এবং দলে কাজ করতে আনন্দ পায়। এরা
মধ্যস্থতা ও সালিসি করে সমস্যা সমাধান করতে পছন্দ করে। এরা সামাজিক
পরিস্থিতি ভাল বুঝে। দলে অন্যদেরকে অংশগ্রহণে সহায়তা করে।
প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা:
যারা
এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তাদের উপর প্রাকৃতিক জগত অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল। এরা
উদ্ভিদ, প্রাণী ও প্রকৃতির বিভিন্ন ধরণের বৈশিষ্ট্য ও সম্পর্ক সহজে বুঝে।
তাই উদ্ভিদ, প্রাণী ও প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গবেষণা করতে ভালবাসে।
এদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শ্রেণীকরণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত
গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা সর্বাধিক প্রয়োগ হয়।
অন্ত:ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা:
যারা
এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা সাধারণত লাজুক ধরণের হয় এবং একাকী থাকতে ও একা
একা কাজ করতে পছন্দ করে। তারা নিজেদের প্রতি সচেতন এবং তাদের মধ্যে
আভ্যন্তরীণ অনুভূতি, মূল্যবোধ ও বিশ্বাস প্রবল থাকে। তাদের মনে অধিকাংশ
সময়ে চিন্তার প্রক্রিয়া আসে। ফলে এরা নিজেরা নিজে নিজেই প্রভাবিত হয়।
বাহিরের প্রভাব এদের মনে কম। এদের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল দৃঢ় ইচ্ছা ও
আত্ম-বিশ্বাস। অনেকে এদের নিকট পরামর্শের জন্য যায়, আবার অনেকে এদের
অসামাজিক হিসেবে গণ্য করে।
REAd MORE: BD NEWS
REAd MORE: BD NEWS
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন