সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কল্যাণী

কল্যাণী

সে অনেক দিন আগের কথা। কল্যাণী দেশে কল্যাণ নামক এক রাজা ছিলেন। তিনি সারাক্ষণ নৃত্য-গীত, আর সোনালী তরলে নিমজ্জিত থাকতেন। বই ছিলো তার চোখের বিষ। তার মতে, বই পড়ে খামোখা সময় নষ্ট করার চেয়ে অশ্বচালনা অথবা তরবারির লড়াই শেখাটা হাজার গুণ শ্রেয়।
একদিন সন্ধ্যায় পানাসক্ত অবস্থায় উর্বশী নৃত্য দেখে সময় কাটানোর পরে সভায় ফিরে সভাসদদের জরুরী তলব করে এক কঠিন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন সবাই কে।

আজ থেকে রাজ্যে বই পড়া বন্ধ। কাউকে বই পড়া অবস্থায় ধরতে পারলে তার গলা কাটা হবে। বই পড়ে কীভাবে সময় এবং অর্থ নষ্ট হচ্ছে তার একটা বিবরণও দিয়ে ফেললেন। তোষামুদে সভাসদরা শুনে বাহবা বাহবা করতে লাগলো। কিন্তু বুদ্ধিমান উজির সাহেব বুঝতে পারলেন এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে। তবে এখনই এমন কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অপেক্ষা করতে লাগলেন মোক্ষম সময়ের। পরদিন সকাল বেলা রাজার প্রাতঃভ্রমণের সময়টাই হতে পারে যথার্থ।

এবং তার পরিকল্পনা ঠিক ভাবেই কাজে লাগলো। সক্কাল সক্কাল পেয়ে গেলেন রাজা মশাইকে।
-সুপ্রভাত মহামান্য!
-সুপ্রভাত উজির! আছো কেমন তুমি?
-জ্বী, আমি খুব ভালো আছি। আপনার পোষা টিয়া পাখি টা ভালো আছে? জেনে খুশি হবেন ,সাড়ে তিন বছর আগে যে প্রজাটির খাজনা মওকুফ করেছিলেন সে এখন নিজের জমি পেয়েছে। পাঁচ বছর আগে ঠিক এই তারিখের পাঁচ দিন পূর্বে আপনার সাথে এই সকাল বেলাতে হাঁটার সময় সেতু নির্মাণ নিয়ে মিনিট পাঁচেক কথা হয়েছিলো। খুব আনন্দের অনুভূতি সেটা। পৌনে নয় বছর আগে...
-সর্বনাশ! কী বলছো এসব! এত কিছু মনে রাখো কীভাবে? রহস্যটা কী?
-রহস্য তো একটা আছেই। তবে বলতে অস্বস্তি লাগছে। যদি আপনি রেগে যান!
-আরে রাগবো কেন? নির্ভয়ে বলো! আমি জানতে চাই।
-আমি প্রচুর বই পড়ি। এতে মস্তিষ্কের চর্চা হয়। স্মরণশক্তি বাড়ে। মগজের কোষ গুলো অকালে মরে যায় না।
-হুম।
কিছুক্ষণ নীরবতা। তবে রাজা ফূর্তিবাজ মানুষ। বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে পারেন না।
-দেখ দেখ! কী সুন্দর একটা পাখি! এই সেদিনও তুমি পাখিটার নাম বলেছিলে। কী যেন নাম তার...
-এটা সুখপাখি মহারাজ।
-ওহ হ্যাঁ, সুখপাখি। মনে থাকবে। কী যেন বললে? সুখ সুখ সুখ পাখি। হু। কী যেন? আবার বলো তো?
-মহামান্য, আপনার চিকিৎসা দরকার। এক ধরণের রোগ আছে, যার কবলে পড়লে সাম্প্রতিক সবকিছু ভুলে যায় মানুষ।
-খামোশ! আমার কোন রোগ হয় নি। আমি ছোটবেলা থেকেই একটু ভুলোমনা।
-রাগবেন না মহারাজ! অসুখটি যদি শুধু ভুলে যাওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকতো, তাহলে এত কথা বলতাম না। এটা ভয়াবহ রোগ। ধীরে ধীরে আপনি নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন, আত্মীয় স্বজনের নামও মনে থাকবে না, অস্থিরতা এবং আতঙ্ক বৃদ্ধি পাবে, এক সাথে দুটো কাজ করতে পারবেন না!
-কী বলছো এসব! আমার মধ্যে তো এমন লক্ষণ আছে! তুমি এসব জানো কীভাবে!
-বই পড়ে মহারাজ!
-হুম। এক্ষণি চলো রাজবৈদ্যের কাছে।

রাজবৈদ্য যত্নের সাথে রাজার রোগ বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে অসুখ কেবল প্রাথমিক পর্যায়ে। এর নিরাময় সম্ভব। কিছু ঔষধ দিলেন। কিছু মানসিক চর্চার পরামর্শ দিলেন। এবং বললেন...
-বেশি করে বই পড়বেন মহারাজ। বই পড়লে মানসিক জড়তা অনেকটাই কেটে যায়। নতুন অনেক কিছু শেখা যায়। মস্তিষ্কের মরা কোষ গুলো সজীব হয়ে ওঠে!
আবারও সেই বই! এদের কথা একদম ফেলাও যায় না, এবং রাখাও যায় না। রাজা বড় বিপদে পড়ে গেলেন। উজির তৃপ্ত মনে হাসী গোপন করে গম্ভীর ভাবে বসে রইলেন।

ফেরার পথে সাহস পেয়ে উজির মশাই বিস্তারিত বয়ান শুরু করলেন বইয়ের পক্ষে। কীভাবে বই মানুষকে আকর্ষণীয় এবং জ্ঞানী করে তোলে। কীভাবে বইয়ের প্রভাবে মানুষ হয়ে ওঠে আরো সংস্কৃতিমনা, এবং বিবেচক। বিশ্লেষক এবং সহানুভূতিশীল মন কীভাবে সবার সম্মানের পাত্র হিসেবে গড়ে তোলে, এই ব্যাপারে এক চমৎকার এবং উদ্দীপক বক্তব্য পেশ করলেন তিনি।
পরদিন এক গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে ধ্রূপদী সঙ্গীত শুনতে শুনতে মহামান্য রাজা ঘোষণা করলেন, এই মহাদেশের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিটা তিনি গড়বেন।
হাততালি যা পেলেন তা একটুও মেকি ছিলো না!

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বুদ্ধিমত্তা কি?

আমেরিকার হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড গার্ডনার প্রদত্ত মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক গবেষণায় দেখা যায় যে, মানুষের কমপক্ষে আট ধরণের বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। এ বুদ্ধিমত্তার মাত্রাও সকলের সমান নয়। প্রত্যেকেই একাধিক বুদ্ধিমত্তা প্রবল। সাধারণত কেউ কোনটাতে প্রবল আবার অন্যটিতে দুর্বল। আচরণ ও কার্যকলাপের মাধ্যমে সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। তবে ভিন্ন ভিন্ন বুদ্ধিমত্তার লক্ষণগুলোও ভিন্ন ভিন্ন। বুদ্ধিমত্তা ৮ প্রকার যথাঃ মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা: যারা এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা জটিল বিষয়ও সহজভাবে কথায় লিখে প্রকাশ করতে পারে। তাদের ভাষা থাকে প্রঞ্জল ও সাবলীল। তারা বই পড়া, কবিতা বা গল্প লেকা, আলোচনায় অংশগ্রহণ করা, কৌতুক বলা, সাহিত্য সৃষ্টি করা ইত্যাদি বেশি পছন্দ করে। তারা নতুন শব্দ লিখতে ভালবাসে। যৌক্তিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা: যারা এ বুদ্ধিমত্তায় প্রবল তারা সমস্যা সহজে বুঝতে পারে এবং যুক্তি প্রয়োগ করে তা সমাধান করতে চায়। তারা সংখ্যা ও গাণিতিক সংজ্ঞা ও ফর্মুলা সহজে আয়ত্ব করে। এরা যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং বিশ্লেষণগত কাজ নিয়ে বেশি চিন্তা করে।

প্রোগ্রামিং ভাষা

                                      প্রোগ্রামিং ভাষা একজন মানুষ তার কার্য সম্পাদন ও মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ভাষা ব্যবহার করে। যে মানুষ যে ভাষা জানে তার সাথে সেই ভাষায় কথা বলতে হয় । কিন্তু বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের কম্পিউটার একটি মাত্র ভাষা বোঝে ,  আর তা হচ্ছে মেশিন ভাষা। মেশিন ভাষা কি ? ০ এবং ১ এ দুটি অংকের সমন্বয়ে মেশিন ভাষার উদ্ভব। সহজ কথায় ০ এবং ১ কে ব্যবহার করে নির্দেশ সাজিয়ে প্রোগ্রাম লেখার পদ্ধতিকে মেশিন ভাষার প্রোগ্রাম বলে। মেশিন ভাষায় লিখিত প্রোগ্রামের অপর নাম অবজেক্ট প্রোগ্রাম। মানুষের জন্য মেশিন ভাষা কঠিন তাই মানুষের ভাষার কাছাকাছি ভাষা  ( যেমন সি , সি ++)  যা অনুবাদক প্রোগ্রামের মাধ্যমে তা মেশিন ভাষায় রুপান্তর করা যায়। কম্পিউটার বা যেকোনো ডিভাইস দিয়ে আপনার নিজের কিংবা সারা বিশ্বের মানুষের জন্য কোন কাজ সম্পাদন করতে চাইলে প্রোগ্রামিং ভাষা জানতে হবে। প্রোগ্রামিং ভাষা কি ? কম্পিউটারের মাধ্যমে কোন প্রোগ্রাম রচনার জন্য ব্যবহৃত শব্দ , বর্ণ , অঙ্ক , চিহৃ প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত রীতি নীতিকে প্রোগ্রামিং ভাষা বলে। বিভিন্ন প্রোগ্রাম রচনার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোগ

সহজেই কোডিং ছাড়া অ্যাপস তৈরী

সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের যোগাযোগ সহজ থেকে সহজতর করে দিচ্ছে স্মার্টফোন । স্মার্টফোন কি ? পারসোনাল ডিজিটাল অ্যসিস্টেন্ট ( পি ডি এ ) আর মোবাইল ফোনের সম্মিলিত রূপই হচ্ছে  স্মার্টফোন । সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে হাজারও রকমের স্মার্টফোন । একদিকে মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে ঘনিষ্ট হয়ে যাচ্ছে , অন্যদিকে প্রতিনিয়ত এর ব্যাবহারকারী দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে । ব্যাবসা, বাণিজ্য, লেনদেন, লেখাপড়া ছাড়াও বহু কাজে ব্যবহার করা যায় স্মার্টফোন । আর স্মার্টফোনের প্রাণ হচ্ছে অ্যাপস ।   অ্যাপস কি ? অ্যাপস বা অ্যাপ্লিকেশন হচ্ছে বিশেষ ধরনের সফটঅয়্যার , যা শুধু স্মার্টফোন ডিভাইসে ব্যবহার করা যায় । যা গেম, ক্যালেন্ডার, মিউজিক প্লেয়ার থেকে শুরু করে ব্যবহারকারীর প্রয়োজনে যে কোনো ধরনের হতে পারে । বর্তমানে বিশ্বে কোম্পানিগুলোর প্রচুর অ্যাপস রয়েছে যা প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হচ্ছে । ক্রমানয়ে নতুন নতুন চাহিদা বা ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে । আর স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর উপযোগী করার জন্য যে কোনো  ধরনের অ্যাপস তৈরি করাই মুলত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভলপমেন্ট ।     স্মার্টফোন, ট্যাবলেটের ম